Movie: Interstellar (2014)
Genre: Sci-fi, Adventure, Drama.
Director: Christopher Nolan
Cast: Matthew McConaughey, Anne Hathaway, Michael Caine, Jessica Chastain, McKenzie Foy And More.
IMDB: 8.6/10
Personal: 10/10
Interstellar- A Cinematic Masterpiece!

ব্যক্তিগতভাবে Sci-fi জনরায় অামার সবচেয়ে পছন্দের মুভি এবং যেকোন জনরা বিবেচনায় অামার দেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুভি। মুভিটি পরিচালনা, অভিনয়,
সিনেমাটোগ্রাফি এবং বিজিএম - সবকিছু মিলিয়ে পারফেক্টলি ব্যালান্সড।
Interstellar কে শুধুমাত্র মুভি বললে ভুল বলা হবে। এটা অাসলে মহাকাশ অার জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটা বড়সড় কোর্স!
অামার অালোচনাটাও একটু দীর্ঘ হবে,সেজন্য অাগেই ক্ষমা চেয়েছে নিচ্ছি। মুভির প্রেক্ষাপট অার বৈজ্ঞানিক ক্লু-গুলো নিয়ে অালোচনা করতে গেলে খুব একটা ছোট অাকারে লেখা সম্ভব নয়।
Christopher Nolan অার তার মাস্টারক্লাস কাজগুলো সম্পর্কে অামরা সবাই কমবেশি জানি। কাজের প্রতি তার ডেডিকেশনও বারবার প্রমানিত। The Dark Knight মুভিতে রিয়েলিস্টিক দেখানোর জন্য অাস্ত একটা হাসপাতাল উড়িয়ে দিয়েছিলেন নোলান।
অার Interstellar বানানোর জন্য তিনি সাহায্য নিয়েছেন নোবেলজয়ী পদার্থবিদ কিপ থোর্নের! এতবড় পদার্থবিদের সাহায্য নিয়ে মুভি বানানো হলে তাদের লক্ষ্য কোন পর্যায়ে থাকতে পারে, তা মোটামুটি অান্দাজ করা যায়। অার অামার মতে তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছেন খুব ভালোভাবেই। মুভিতে বৈজ্ঞানিক থিউরিগুলো এত সুক্ষ্মভাবে ব্যবহৃত হয়েছে যে অাপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।
যারা ইন্টারস্টেলার দেখেছেন কিন্তু সকল থিউরি ক্লিয়ারলি বুঝতে সমস্যা অাছে অথবা যারা Sci-fi মুভি বা মহাকাশ সম্পর্কে অাগ্রহী তারা পোস্টটি পুরোপুরি মনোযোগ সহকারে পড়লে হেল্প হবে,অাশা করি।
অাসলে অামাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে ২/৩ বার মনোযোগ সহকারে দেখলেও ইন্টারস্টেলারের বিজ্ঞান পুরোপুরি বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। এরজন্য বিজ্ঞানের এডভান্স কিছু থিউরি বা হাইপোথিসিস নিয়ে স্টাডি করা প্রয়োজন।
অার এই মুভির ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক থিউরিগুলো পরিষ্কারভাবে না বুঝলে, মুভির গল্প বুঝাও সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে মনোযোগ সহকারে পুরোপুরি দেখার পরেও শুধুমাত্র বৈজ্ঞানিক কনসেপ্টগুলো ক্লিয়ার না হওয়ার কারনে মুভিটা অাপনার কাছে ওভাররেটেড, এমনকি ফালতুও মনে হতে পারে!
অামরা এখানে মুভিটার কনফিউজিং বৈজ্ঞানিক থিউরি অার স্টোরি নিয়ে মোটামুটি বিস্তারিত অালোচনা করবো, যেন সবার জন্য বুঝতে সুবিধা হয়। সঙ্গত কারনেই লেখাটা একটু বড় হতে যাচ্ছে। অাশা করি, জার্নিটা বিরক্তিকর হবে না।
#স্টোরিলাইনঃ সাল ২০৬৭! পৃথিবী বসবাসের
উপযোগীতা হারানোর দ্বারপ্রান্তে। স্কুলে বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে - ১৯৬৯ সালের এ্যাপোলো-১১ মিশন পুরোটাই সাজানো নাটক ছিলো। এতে করে বাচ্চারা হয়তো বিজ্ঞানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কৃষি খাতে মনোযোগী হবে। এমনকি নাসাও তাদের কর্মকাণ্ডে অব্যাহতি দিয়েছে! এছাড়া কোন উপায় তাদের সামনে ছিলো না।
গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল মানবজাতির বসবাসের অনুপযোগী প্রায়, অন্যদিকে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও পৃথিবী অনুপযুক্ত। গম,ভুট্টা অার ঢেঁড়স ছাড়া অন্যান্য ফসলগুলো অনেক অাগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত। এমনকি ৭ বছর অাগে গম অার চলমান বছরে ঢেঁড়সও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে শুধু ভুট্টা চাষ করা সম্ভব হচ্ছে, ব্লাইটের অাক্রমণে সেটাও হয়তো কয়েক বছরের মধ্যেই অসম্ভব হয়ে পড়বে। যেখানে মানুষের রুটি-রুজির নিশ্চয়তা নেই, মানবজাতির ভবিষ্যৎ যেখানে হুমকির মুখে, সেখানে বিজ্ঞানের পিছনে টাকা ইনভেস্ট করা অপচয় ছাড়া অার কিছুই নয়।
এই মহাবিপদ থেকে বাঁচিয়ে কিভাবে মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়,সেটাকে বেইস করেই এগিয়েছে ইন্টারস্টেলারের গল্প।
গল্পে ফেরা যাক.....
মুভির প্রধান চরিত্র কুপার একজন কৃষক,সে তার ছেলে (টম), মেয়ে (মার্ফ) অার শ্বশুরকে নিয়ে বসবাস করে। অাধুনিক বিজ্ঞানের অাশীর্বাদে তারা ট্র্যাক্টরে অটো পাইলট ব্যবহার করার সুবিধা পায়।
হঠাৎ একদিন দেখা যায় তাদের ট্র্যাক্টরগুলো মাঠ ছেড়ে বারবার বাড়ীর দিকে ফিরে অাসছে। অন্যদিকে মার্ফের ঘরের বুকশেল্ফের বইগুলো মাঝেমাঝেই এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকে। মার্ফের অাগ্রহ সত্ত্বেও কুপার প্রথম প্রথম ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যায়।
এক পর্যায়ে তাদের ধারনা হয় যে,এটা সাধারণ এলোমেলো কোন ঘটনা নয়, বরং গ্র্যাভিটেশনাল এ্যানোমালি বা অভিকর্ষের অনিয়ম! কুপার অার মার্ফ ধারনা করে, কেউ অভিকর্ষ বল ব্যবহার করে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাচ্ছে।
বাইনারি কোড ব্যবহার করে সেই সিগন্যাল থেকে কুপার একটা লোকেশন পায়,এবং সেখানে যায়।
সেখানে গিয়ে কুপার দেখতে পায় তার পূর্বপরিচিত ড. ব্র্যান্ডকে এবং জানতে পারে সেটা অাসলে নাসার অফিস, যেখানে গোপনে নাসা তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। কুপার অাসলে পরবর্তীতে কৃষক হতে বাধ্য হয়েছিলো, অাগে সে নাসার পাইলট ছিলো,সে সূত্রেই ড. ব্র্যান্ড তার পরিচিত।
ড. ব্র্যান্ডের কাছে কুপার জানতে পারে, বিজ্ঞান পৃথিবীর ক্লাইমেটের উন্নতির জন্য নয়, বরং কাজ করছে পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে! সেক্ষেত্রে তাদের ২টা প্ল্যান রয়েছেঃ
Plan-A: পৃথিবীর মানুষ নিয়ে অন্য বসবাসযোগ্য গ্রহে পাড়ি দেওয়া।
Plan-B: মানবভ্রূন সেই গ্রহে নিয়ে নতুন কলোনি তৈরি করা।
ড. ব্র্যান্ড কুপারকে জানান ৪৮ বছর অাগে শনি গ্রহের পাশে একটা ওয়ার্মহোল দেখা দিয়েছে, যেটা অন্য অারেকটি গ্যালক্সিতে যাওয়ার মাধ্যম। ড. ব্র্যান্ড জানানঃ এই ধরনের ওয়ার্মহোল নিজে নিজে তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। কেউ এটা তৈরি করেছে। কুপার প্রশ্ন করেঃ তারা কারা? মুভির প্লটে খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা প্রশ্ন এটি।
তবে এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে অামাদের অপেক্ষা করতে হবে মুভির ক্লাইম্যাক্স পর্যন্ত!
এদিকে নাসা বসবাসযোগ্য গ্রহের খোঁজে ১০ বছর অাগেই সেই ওয়ার্মহোল দিয়ে অন্য পাশের গ্যালাক্সিতে ল্যাজারাস মিশন নামের একটি অপারেশনে ১২জন নভোচারীকে পাঠিয়েছে বলেও জানান ড. ব্র্যান্ড।
এবং তাদের মধ্যে ৩ জনের কাছ থেকে পজিটিভ সিগন্যাল পাওয়া গেছে, তারা হলো ড.ম্যান, মিলার ও এডমন্ডস।
বর্তমানে মিশন এনডিউরেন্স নামের একটি অপারেশনের পরিকল্পনা করছে নাসা। ড. ব্র্যান্ড কুপারকে সেই মিশনের পাইলট হওয়ার প্রস্তাব দেন। সবকিছু শোনার পর কুপার প্রথমে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও, পরবর্তীতে রাজী হয়। কুপারের মেয়ে মার্ফ এতে বেজায় অখুশি হয়। যাবার সময় মার্ফ কুপারকে তার ফিরে অাসার সময়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে কুপার মার্ফকে বলে যায় যে, ফিরে অাসার পর হয়তো তার অার মার্ফের বয়স সমানও হয়ে যেতে পারে! (সাধারণ অাপেক্ষিকতা থিউরি)
সব ইমোশন পিছনে ফেলে শুরু হয় কুপারের এনডিউরেন্স যাত্রা। কুপারের যাত্রাসঙ্গী এমিলিয়া ব্র্যান্ড (ড. ব্র্যান্ডের মেয়ে), রমিলি, ডয়েল এবং দুই রোবট: টার্স ও কেইস। শনির পাশের ওয়ার্মহোল দিয়ে অামাদের সৌরজগত এবং গ্যালাক্সি ছেড়ে নতুন গ্যালাক্সিতে প্রবেশ করে এনডিউরেন্স! সেখানে দেখা যায় পজিটিভ সিগন্যাল পাওয়া ৩টি প্ল্যানেটই ব্ল্যাক হোলের (গারগ্যাঞ্চুয়া) অাশেপাশে।মিলার'স এবং ম্যান'স প্ল্যানেট গারগ্যাঞ্চুয়াকে অরবিট করছে অার মিলার'স প্ল্যানেট একদম ইভেন্ট হরাইজনের পাশেই।
মিলারের তথ্যগুলো বেশি প্রমিসিং মনে হওয়ায় এবং নিকটতম হওয়ায়, তারা মিলারের প্ল্যানেটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রমিলি জানায়, মিলার'স প্ল্যানেটের ১ঘন্টা কাটালে পৃথিবীতে প্রায় ৭ বছরের মত কেটে যাবে!
খুব অল্প সময়ে কাজ শেষ করার শর্তে টার্স ও রমিলিকে এনডিউরেন্সে রেখে কুপার, এমিলিয়া, কেইস এবং ডয়েল রওনা দেয় মিলার'স প্ল্যানেটের উদ্দেশ্যে এবং সেখানে পৌঁছে তারা মিলারকে মৃত অাবিষ্কার করে এবং বিশাল সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে যায়। গারগ্যাঞ্চুয়ার প্রচন্ড অভিকর্ষ বলের কারনে বিশালাকার ঢেউগুলো সেখানে খুবই সাধারণ ঘটনা। সুতরাং, এখানে মানব কলোনি গড়ে ওঠা মোটেও সম্ভব নয়।
সেখান থেকে কোনমতে কুপার এবং এমিলিয়া বেঁচে ফিরে অাসে, কিন্তু ডয়েল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেঞ্জারে উঠতে ব্যর্থ হওয়ায় মারা যায়। কুপার এ্যান্ড কোং এনডিউরেন্সে ফিরে অাসার পর রমিলি জানায় তারা প্রায় ২৩ বছর সেখানে নষ্ট করে ফেলেছে!
এই দীর্ঘ ২৩ বছরের জমে থাকা বার্তা অনুসন্ধান করতে গিয়ে কুপার দেখে তার ছেলে টম সন্তানের বাবা হয়ে গেছে। কিন্তু মার্ফ শুধু একবারই বার্তা দিয়েছে! যে বছর মার্ফের বয়স কুপারের পৃথিবী ত্যাগ করার সময়ের বয়সের সমান হয়েছিলো,শুধু সেই জন্মদিনে। মার্ফ কুপারকে রিমাইন্ডার দেয় পৃথিবী ছেড়ে অাসার সময় তাকে বলা কুপারের কথাটার ব্যাপারে।
অাবেগ সরিয়ে রেখে এবার পালা পরের সম্ভাব্য গ্রহে যাওয়ার। গ্রহ নির্বাচনে দ্বিমত হলেও শেষ পর্যন্ত ড. ম্যানের গ্রহে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে গিয়ে ড. ম্যানকে হাইবারনেশনে পাওয়া যায়। সেখান থেকে উঠে সে তার গ্রহ সম্পর্কে পজিটিভ তথ্য দেয়।
এ সময় মার্ফ ড. ব্র্যান্ডের মৃত্যুর সংবাদ জানিয়ে বার্তা দেয় এবং Plan-A যে একরকম ধোঁকা ছিলো তা জানিয়ে দেয়। ড. ব্র্যান্ড মারা যাওয়ার অাগে মার্ফকে তার অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব দিয়ে যান। এদিকে ড. ম্যান অাগে থেকেই Plan-A'র মিথ্যার ব্যাপারটা জানে বলে জানায়।
অতঃপর ম্যান'স প্ল্যানেট থেকে ফিরে অাসার অাগে কুপার ড. ম্যানকে নিয়ে ফাইনাল ডাটা সংগ্রহের জন্য বের হয়। এসময় হঠাৎ ড. ম্যান কুপারকে হত্যা করার চেষ্টা করে। কারনঃ ড. ম্যান তার প্ল্যানেটের ডাটাগুলো নিজের মনগড়া দিয়েছিলো, এবং সেগুলো পুরোপুরি মিথ্যা ছিলো। সে ডাটাগুলো প্রমিসিংভাবে সাজিয়ে পাঠালে কেউ তাকে বাঁচাতে অাসবে ভেবে সে এই কাজ করেছে।
এখন সবাইকে মেরে সে এখান থেকে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। অাক্রমণ থেকে কোনমতে কুপার বেঁচে ফিরে, কিন্তু ড. ম্যানের পরিকল্পিত বিস্ফোরণে রমিলি মারা যায়।
অতঃপর ড. ম্যান একটা রকেট নিয়ে এনডিউরেন্সের দিকে যায়। কুপার অার এমিলিয়ার অনুরোধ সত্ত্বেও ড. ম্যান নিজে এনডিউরেন্সে অানঅথোরাইজড ডকিংয়ের চেষ্টা করে এবং চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে নিজের প্রান হারায়, সাথে এনডিউরেন্সকেও মারত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এনডিউরেন্স প্রচন্ড বেগে ঘুরতে শুরু করে। কুপার চূড়ান্ত প্রচেষ্টায় প্রবল বেগে ঘূর্ণনরত এনডিউরেন্সে ডকিং করতে সক্ষম হয়।
কিন্তু ততক্ষণে এনডিউরেন্স গারগ্যাঞ্চুয়ার ইভেন্ট হরাইজনের একদম কাছাকাছি চলে যায়। জ্বালানী কম থাকায় তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে, ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ বল ব্যবহার করে লাস্ট হোপ এডমন্ডস্ প্ল্যানেটের দিকে এগিয়ে যাবে তারা, এই পদ্ধতি অনুসরন করায় পৃথিবীর সাপেক্ষে তাদের ৫১ বছর খরচ হয়ে যায়। কুপার তার সন্তানদের দেখা পাওয়ার অাশা ছেড়ে দেয় এবং কঠিনতম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
এডমন্ডস' প্ল্যানেটে যেতে হলে তাদের এনডিউরেন্সের ভর কমাতে হবে, তাছাড়া ব্ল্যাক হোলের গ্র্যাভিটি থেকে বের হওয়া সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে কুপার প্রথমে টার্সকে গারগ্যাঞ্চুয়ার ভিতরে ছেড়ে দেয়, যাতে সে সিঙ্গুলারিটি থেকে কোয়ান্টাম ডাটা সংগ্রহ করতে পারে। তারপর অকস্মাৎ কুপার নিজেও ব্ল্যাক হোলে যাওয়ার ঘোষণা দেয়,এবং রকেট ডিট্যাচ করে নেয়। বাধ্য হয়ে একা এডমন্ডসের প্ল্যানেটের উদ্দেশ্য যেতে থাকে এমিলিয়া।
গারগ্যাঞ্চুয়ার ভিতরে পুরোটা সময় রেকর্ড করতে থাকে কুপার। এক পর্যায়ে সে টেসারেক্টের ভিতরে পড়ে যায় যা পঞ্চমাত্রিক জগৎ। অামাদের ত্রিমাত্রিক পৃথিবীতে সময় বরাবর ভ্রমণ অসম্ভব। কিন্তু এই টেসারেক্টের জনকরা চতুর্মাত্রা জয় করে পঞ্চমাত্রা অাবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে, যেখানে সময় সামনে পিছনে যায় না,বরং ফ্রেমে বাঁধাই করে রাখা যায়,তারপর যেখানে ইচ্ছা ভ্রমণ করা যায়।
টেসারেক্টে পড়েই কুপার মার্ফের ঘর দেখতে পায় এবং সেই ঘটনা দেখতে পায়, যার মাধ্যমে কুপার ও মার্ফ নাসার লোকেশন পেয়েছিলো।এর পরই কুপার মিশন এনডিউরেন্সের জন্য বাসা থেকে শেষবার বের হয়ে অাসার সময়টা দেখে। কুপার নিজেকে অাটকানোর জন্য সিগন্যাল পাঠাতে থাকে। মার্ফ সিগন্যাল ধরতে পারলেও কুপার তাতে পাত্তা দেয় না এবং চলে অাসে,অার তার ফলেই তো অাজ কুপার এখানে,গারগ্যাঞ্চুয়া নামক এই ব্ল্যাক হোলের রহস্যে বন্দী।
হতাশ হয়ে পড়ে কুপার। এমতবস্থায় হঠাৎ টার্সের সিগন্যাল পাওয়া যায় এবং টার্স কুপারকে টেসারেক্ট সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়। কুপার বুঝতে পারে যে এই টেসারেক্টের জনক অাসলে তারাই, মানে মানবজাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। কুপার টার্সকে সিঙ্গুলারিটি থেকে প্রাপ্ত কোয়ান্টাম ডাটাগুলো মোর্স কোডে দিতে বলে, যেন তা মার্ফের কাছে বোধগম্য করে পাঠানো যায়।
প্রথমদিকে ড. ব্র্যান্ড ওয়ার্মহোল সম্পর্কে বলেছিলেন, কেউ হয়তো মানবজাতি রক্ষার স্বার্থে ওয়ার্মহোল তৈরি করে দিয়েছে। এই কেউ-ই হলো Bulk Beings বা মানুষের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তারা কুপারকে নয় বরং মার্ফকে সিলেক্ট করেছে মানবজাতি রক্ষার এই মিশনের জন্য। তারা কুপারকে ৫ম মাত্রা এবং ৩য় মাত্রার মধ্যে ব্রীজ হিসেবে ব্যবহার করেছে। কারন শুধু কুপারই জানে কোন সময়ে অার কিসের মাধ্যমে সিগন্যাল দিলে মার্ফ ঠিকমত ধরতে পারবে।
কুপার মার্ফকে তার নিজের দেওয়া ঘড়িতে সিগন্যাল পাঠায়,এবং মার্ফ তা সঠিকভাবে রিসিভ করতে সক্ষম হয়। বাইনারি কোড ব্রেক করে মার্ফ Plan-A সমাধান করে ফেলে। উদ্দেশ্য সফল হলে Bulk Beings (মানুষের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম) তাদের টেসারেক্ট ক্লোজ করে ফেলে এবং টাইম ট্রাভেল করিয়ে কুপারকে শনির পাশে রেখে যায়। এর মধ্যবর্তী সময়ে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে স্পেস ষ্টেশন নিয়ে শনির কাছাকাছি চলে অাসে পৃথিবীবাসী এবং কুপারকে উদ্ধার করে।
এবার অাসে ইন্টারস্টেলারের সুন্দরতম মুহুর্ত! কুপার জ্ঞান ফিরে নিজেকে হসপিটালে অাবিষ্কার করে এবং ডাক্তার তাকে জানায় তার বর্তমান বয়স ১২৪ বছর! সে জানতে পারে, এটা একটা মহাকাশ স্টেশন যা তার মেয়ের নামে তৈরি। মার্ফ তার বাবার স্মরনে নিজের বাড়ীর পারিপার্শ্বিকতার অাদলে একটা মডেল বাড়ীও তৈরি করে,যেখানে গিয়ে কুপার টার্সকে ফিরে পায়।
এবার মার্ফের সাথে সাক্ষাতের পালা। এখন কেমন দেখতে হতে পারে মার্ফ, কী অবস্থায় অাছে সে? মার্ফকে দেখতে গেলে হাসপাতালের বেডে একজন শতবর্ষী মহিলাকে দেখা যায়, যাকে দেখে কুপার কিছুটা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকায়। মার্ফ তার বাবাকে ঠিকই চিনে নেয়। হ্যাঁ এই শতবর্ষী মহিলা-ই মার্ফ। সময়ের অাপেক্ষিকতার মারপ্যাঁচে মেয়ে অাজ তার বাবার দ্বিগুণ বয়সী!
এই মুহুর্তটার সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। গল্পে বাবা-মেয়ের ভালোবাসার এই বন্ধনই এতবড় বিজয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। অবশেষে বিজয়ের সেই মুহূর্তে দুজনের এমন মিলন! চোখের কোনে অশ্রুর অাগমন ঠেকানো সম্ভব হয় না।
শেষে মার্ফ কুপারকে জানায় যে, এমিলিয়া ব্র্যান্ড এডমন্ডস প্ল্যানেটে একা অাছে,সে যেন তাকে ফিরিয়ে অানতে যায়। ঐদিকে এডমন্ডস প্ল্যানেটে গিয়ে এমিলিয়া পুরোপুরি বসবাসযোগ্য একটা পরিবেশের সন্ধান পেয়েছে। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত এডমন্ডস পজিটিভ সিগন্যাল পাঠানোর পর হাইবারনেশনে থাকা অবস্থায় দৈত্যাকার এক পাথরে পিষ্ট হয়ে মারা যায়।
কুপার এমিলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়... মুভিটা এখানেই শেষ হয়ে যায়।
১.ওয়ার্মহোলঃ সহজ করে বললে, ওয়ার্মহোল হলো মহাবিশ্বের দুই প্রান্তের মধ্যে শর্টকাট রাস্তা,যাকে বাংলায় ক্ষুদ্রবিবর বলা হয়। এটা অাইনস্টাইন রোজেন সেতু নামেও পরিচিত। বিজ্ঞানীদের পক্ষে এখনও সরাসরি ওয়ার্মহোল পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তবে অাইনস্টাইনের সাধারণ অাপেক্ষিকতার সমীকরনের এটার জোড়ালো সমাধান রয়েছে। অালো সাধারণত বাঁক নেয় না, সরল পথে চলে। শর্টকাট ব্যবহৃত হলে কয়েক অালোকবর্ষ পথ কয়েক মিটারে নিয়ে অাসা সম্ভব! অার ওয়ার্মহোল হচ্ছে সেই শর্টকাট পথ।
২.সময়ের অাপেক্ষিকতাঃ সময়ের অাপেক্ষিকতা বোঝানোর জন্য একটা সহজ উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। মনে করুন, অাপনি ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করেন। এখন অাপনি যদি বন্ধুদের সাথে একটা টি-২০ ম্যাচ খেলেন তাহলে অাপনার এই ২-৩ ঘন্টা সময় কোনদিক দিয়ে কেটে যাবে টেরই পাবেন না। কিন্তু এই সময়টাই যদি অাপনি একা কোনকিছুর অপেক্ষায় কাটাতে যান,তাহলে মনে হবে যেন সময় স্লো হয়ে গেছে,কাটতেই চাচ্ছে না! এটা অাপেক্ষিকতার বাস্তব উদাহরণ না হলেও অাপেক্ষিকতা বুঝতে সাহায্য করবে।
অাপনি যদি পৃথিবীর চেয়ে অধিক অভিকর্ষ বল সম্পন্ন কোন স্থানে অবস্হান করেন, তাহলে সেখানে সময় ধীরে চলবে। অর্থাৎ অভিকর্ষ বলের তারতম্যভেদে সেখানকার ১ মিনিটে পৃথিবীতে ঘন্টা/দিন/মাস এমনকি বছরও অতিক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। অার মুভিতে কুপারদের সাথে সেটাই ঘটেছিলো মিলার'স প্ল্যানেট অার গারগ্যঞ্চুয়ার ইভেন্ট হরাইজন অতিক্রমের সময়।
৩.গারগ্যাঞ্চুয়াঃ ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর এমন স্থান যেখানে অভিকর্ষ বলের পরিমান অতিমাত্রায় বেশি। যে অভিকর্ষ বল মহাবিশ্বের যেকোন বলকে পরাজিত করতে সক্ষম। ব্ল্যাক হোলের অভিকর্ষ বলকে পরাজিত করে যেকোন বস্তু, এমানকি মহাবিশ্বের দ্রুততম পার্টিকেল অালোও বের হয়ে অাসতে পারে না!
গারগ্যাঞ্চুয়া হলো তেমনি একটি অতি দ্রুত ঘুর্নায়মান বৃদ্ধ ব্ল্যাক হোল,যার সেন্টার সাধারণ ব্ল্যাক হোলের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম স্ট্যাবল।
৪.সিঙ্গুলারিটিঃ সিঙ্গুলারিটি হলো এমন এক স্থান যেখানে সাধারণ অাপেক্ষিকতার কারনে মহাবিশ্বের যেকেন বস্তুর গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ড গাণিতিকভাবে অসীম হয়ে যায়। সাধারনভাবে বিবেচনা করলে অামরা সিঙ্গুলারিটিকে ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রবিন্দু ভাবতে পারি। সিঙ্গুলারিটি সম্পর্কে সকল বিজ্ঞানী একমত নন। তবে যারা এর পক্ষে কথা বলেছেন তাদের অধিকংশের মতে সিঙ্গুলারিটিকে বিগ ব্যাংয়ের পূর্বে দশা বিবেচনা করা হয়েছে। সিঙ্গুলারিটি সেই জায়গা,যেখানে রয়েছে অামাদের চিন্তাশক্তির বাইরের নানা অজানা রহস্যের সমাধান।
৫.টেসারেক্টঃ অামরা দ্বিমাত্রিক জগতে বর্গ দেখতে পায়। একে তৃতীয় মাত্রায় নিয়ে গেলে ঘনক পাওয়া যায়। অার চতুর্থ মাত্রায় নিয়ে গেলে পাওয়া যায় টেসারেক্ট!
মুভির টেসারেক্টটি তৈরি করে মানবজাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, যাদেরকে Bulk Beings নামে অভিহিত করা হয়েছে। টেসারেক্টটি হলো পঞ্চমাত্রিক জগত। যেখানে ত্রিমাত্রিক দুনিয়াকে ফ্রেমে বন্দী করার মত করে সাজিয়ে রাখা যায়। টেসারেক্টের জগতে সময়ও দৈর্ঘ্য,প্রস্থ এবং উচ্চতার মত ফিজিক্যাল ডাইমেনশন পেয়ে গেছে। মানবজাতির ভবিষ্যত প্রজন্ম বিজ্ঞানে অতি উন্নতির ফলে এরকম টেসারেক্ট তৈরি করা সম্ভব হয়েছে,যা তারা মানবজাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে কাজে লাগিয়েছে।
এখানে একটি প্যারাডক্স রয়েছে - "মানবজাতির ভবিষ্যত প্রজন্মই যদি কুপারকে এখানে এনে থাকে, তাহলে তারা কিভাবে কুপার অাসার পূর্বেই এই অবস্থানে পৌঁছালো?" কারন কুপারের মাধ্যমেই পৃথিবীর মানুষদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করার পথ তৈরি হয়। টাইম-ট্রাভেলের ক্ষেত্রে এরকম বুটস্ট্র্যাপ প্যারাডক্স সাধারণ ঘটনা।
মুভিটিতে ব্যবহৃত বিজ্ঞানের থিউরিগুলো সম্পর্কে অারও বিস্তারিত জানতে চাইলে Kip Thorne'র লেখা "The Science Of Interstellar" বইটি পড়ে নিতে পারেন।
বইটিতে তিনি Interstellar মুভির একদম প্রাথমিক প্রস্তুতি থেকে শুরু করে মুভির প্রতিটি বৈজ্ঞানিক টার্ম নিয়ে বিস্তারিত অালোচনা করেছেন।
যারা সায়েন্স ফিকশন পছন্দ করেন তাদের জন্য মুভির জগতে Interstellar'র চেয়ে ভালো পরামর্শ অার কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না। সুতরাং, এখনও দেখা বাকি থাকলে শীঘ্রই বসে পড়ুন ক্রিস্টোফার নোলানের মাস্টারক্লাস এই কাজটি দেখার জন্য।
0 Comments