ছবিঃ অজ্ঞাতনামা
ভাষাঃ বাংলা
আইএমডিবিঃ ৯/১০
পারসোনালঃ ১০/১০
অভিনয়েঃ মোশারফ করিম, ফজলুর রহমান বাবু, শহিদুজ্জামান সেলিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, নিপুন।
পরিচালনাঃ তৌকির আহমেদ।
হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টানে কি আসে যায়? একটা মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মানুষ। একটা সৎকারের অধিকার তো তার আছে"।
এমনি অসাধারন সব সংলাপ নিয়ে তৈরী "অজ্ঞাতনামা" ছবিটি তৌকির আহমেদের নিজের একই নামের উপন্যাস হতে নির্মিত হয় ২০১৬ সালে।
২০১৬ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবের বানিজ্যিক শাখায় প্রদর্শনসহ দেশী বিদেশী নানা সম্মাননায় এবং পুরস্কারে ভূষিত হয় ছবিটি। শ্রেষ্ঠ চলিচ্চিত্র হিসেবে জাতীয় পুরস্কার বাগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি শহিদুজ্জামান সেলিম পান সেরা খল অভিনেতা এবং তৌকির আহমেদ পান শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের পুরস্কার।
এক প্রবাসীর গল্প, একটি পরিবারের গল্প, একটি লাশের গল্প অজ্ঞাতনামা। এক ঝড় বৃষ্টির রাতে পুলিশের কাছে বৈদেশীক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয় থেকে চিঠি আসে আরব আমিরাতের আজমানে আবদুল ওয়াহাব নামের একজন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। পুলিশ ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সে বাড়িতে গিয়ে জানতে পারে আবদুল ওয়াহাব মারা যায় নি। সে বেঁচে আছে। তলব পড়ে মানবপাচারকারী দালাল রমজান দালালের। সেই আবদুল ওয়াহাবকে পাঠিয়েছিলো বিদেশে। কিন্তু আবদুল ওয়াহাব যেহেতু বেঁচে আছে তাহলে তার পাসপোর্ট সেখানে গেলো কিভাবে? উত্তর পাওয়া গেলো গলাকাটা পাসপোর্ট (নাম ঠিকানা একজনের ছবি আরেকজনের) দিয়ে সে আরেক গ্রামের আছির উদ্দিন প্রামাণিককে পাঠিয়েছিলো আবদুল ওয়াহাবের নামে। সে গ্রামে পৌছে আছিরের বাবা কিফায়াতকে পরিবারের মৃত্যুসংবাদ দেয়। লাশ আনতে রওয়ানা হয় আছিরের বাবা, চাচাতো ভাই, রমজান দালাল সহ পুলিশ। এরপর লাশ নিয়ে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সূত্রপাত। এবং আপনাকে নাড়া দিবে এই ঘটনা নিশ্চিত।
তৌকির আহমেদ পরিচালক হিসেবে কেমন তা আলাদা করে বলার প্রয়োজন মনে করিনা। তবে প্রশংসা করতে চাই তার জীবনধর্মী গল বলার ধরন। অসাধারন একটি গল্প বাছাই বলতেই হবে, যার লেখকও তিনিই। ক্যামেরার কাজ ভালোই ছিলো, যতটা হলে গ্রামের বা গল্পের অনুযায়ী বাস্তবসম্মত মনে হয় ততটুকু ভালো ছিলো। আর সাথে স্পেশালি উচ্চারন করতে হবে মিউজিকের জন্য পিন্টু ঘোষের নাম। অসাধারন ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড আর গানগুলোর জন্য।

শক্তিশালী গল্পের পর অভিনয়টাও ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। খুবই বাস্তবসম্মত গল্পের বাস্তবসম্মত অভিনেতা অভিনেত্রী দরকার ছিলো। যেটা তৌকির আমহেদ সিলেকশনে ভুল করেন নি। বাংলাদেশের সেরা কয়েকজন অভিনেতা যদি বলা হয় যাদের নাম আসতে পারে তাদের কয়েকজনকেই তিনি বাছাই করেছেন। আছিরের বাবা কেফায়েত উদ্দিনের চরিত্রে রত্ন ফজলুর রহমান বাবু, শহিদুজ্জামান সেলিম, মোশারফ করিম, শতাব্দি ওয়াদুদ, নিপুন, শাহেদ আলী ছিলেন মূল চরিত্রে। এবং সবার অভিনয় তাদের জায়গায় সেরা ছিলো।
বিশেষ করে ফজলুর রহমান বাবুর কথা না বললেই নয়। এই মানুষটার পুরো শরীর অভিনয় করে মনে হয়। প্রতিটা ডায়ালগ, তার চাহনী আপনার সাথে কথা বলবে। আয়নাবাজিতে চঞ্চল চৌধুরীর কাছে সেবার জাতীয় পুরস্কার তিনি না পেলেও খল চরিত্রে শহিদুজ্জামান সেলিম পেয়েছেন। আর মোশারফ করিম বরাবরের মতই। "যেই পাত্রে রাখিবে সেই পাত্রের আকার ধারন করিবে" সূত্র মেনে চলা।
সর্বোপরী এই গল্প আপনাকে একটা ভাবনার জগতে নিয়ে যাবে। আপনাকে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিবে। কেনো? কিভাবে? কিসের আশায় প্রবাসীরা ছুটে চলে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও এই ছবি দেখার পর সেই প্রশ্ন আরেকবার আপনার মাথায় উঁকি দিবে। উত্তরটা নিজেই নিজের মত খুজে নিবেন। মিলিয়ে নিবেন।

0 Comments